☘️ আত্মার্পণস্তবঃ (আপ্পয়্যদীক্ষিত বিরচিতঃ) উন্মত্ত পঞ্চাশৎ থেকে তিন নং শ্লোক অর্থ সহিত বিশ্লেষণ করছি —

 


প্রথমে জানা যাক, আত্মার্পণস্তবঃ ও 

উন্মত্ত পঞ্চাশৎ এই দুটি আসলে কী !! 


“আত্মার্পণস্তবঃ” (आत्मार्पणस्तवः) এবং “উন্মত্ত পঞ্চাশৎ” (उन्मत्त पञ्चाशत्) – দুটোই মহান শৈব আচার্য শ্রী আপ্পয়্য দীক্ষিত (১৬শ শতক) কর্তৃক রচিত সংস্কৃত স্তোত্রগ্রন্থ।


সংক্ষেপে পরিচয়— 


👉 1. আত্মার্পণস্তবঃ


এর অর্থ ― আত্মার্পণের স্তব অর্থাৎ শিবের কাছে নিজের সমগ্র সত্তা, দেহ, মন, প্রাণ, কর্ম ইত্যাদি নিবেদন করার স্তোত্র।


ভক্তি-ভরা আত্মসমর্পণের ভাষায় রচিত, যেখানে ভক্ত শিবকে জানাচ্ছেন যে তিনি নিজের সমস্ত কিছু শিবের আরাধনায় উৎসর্গ করেছেন।


👉 2. উন্মত্ত পঞ্চাশৎ


উন্মত্ত মানে ‘ভক্তির উন্মাদনা’, আর পঞ্চাশৎ মানে পঞ্চাশটি শ্লোক।


এটি শিবভক্তির অতি উন্মাদ অবস্থার প্রকাশ—যেখানে ভক্ত শিব ছাড়া আর কিছুই দেখেন না, শিবই তাঁর কাছে সর্বস্ব।


ভক্তি এখানে এমনভাবে বর্ণিত যে ভক্তকে দেখে মনে হয় তিনি উন্মাদ, কিন্তু সেটাই ভক্তির সর্বোচ্চ রূপ।


👉 সহজভাবে বললে, দুটোই শিবস্তোত্র, একটিতে আত্মসমর্পণ, আরেকটিতে উন্মত্ত ভক্তি প্রকাশিত হয়েছে।


এবার উন্মত্ত পঞ্চাশৎ অর্থাৎ ৫০ টি শ্লোকের মধ্যে তিন নং শ্লোকটি অর্থ সহিত বিশ্লেষণ করছি — 


🌿 " ইন্দ্রং মিত্রং বরুণমনিলং পদ্মজং বিষ্ণুমীশং

প্রাহুস্তে তে পরমশিব তে মায়য়া মোহিতাস্ত্বাম্।

এতৈস্সার্ধং সকলমপি যচ্ছক্তিলেশে সমাপ্তং

স ত্বং দেব শ্রুতিষু বিদিতঃ শম্ভুরিত্যাদিদেবঃ॥


👉 অর্থঃ— হে পরমশিব! মায়ার প্রভাবে মোহাচ্ছন্ন হয়ে অজ্ঞেরা আপনাকেই কখনো ইন্দ্র, কখনো মিত্র, কখনো বরুণ, কখনো বায়ু, কখনো পদ্মজ (ব্রহ্মা), কখনো বিষ্ণু, কখনো ঈশ (রুদ্র) বলে আখ্যায়িত করে।

কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, এ সকল দেবতাদের সঙ্গে সমেত, সমগ্র জগতই কেবল আপনার এক ক্ষুদ্র শক্তিখণ্ডে সীমাবদ্ধ।

অতএব, হে দেব! শ্রুতি (বেদ) গুলিতে আপনাকেই "শম্ভু", "আদিদেব" বলে বর্ণনা করা হয়েছে।


👉 বিশ্লেষণঃ— মানুষ (বা দেবতাদেরও) অনেকে, তোমারই মায়াশক্তিতে আচ্ছন্ন হয়ে, তোমাকেই কখনো ইন্দ্র, কখনো মিত্র, কখনো বরুণ, কখনো বায়ু, কখনো ব্রহ্মা, কখনো বিষ্ণু, কখনো ঈশ/রুদ্র বলে ডাকে। কিন্তু সত্য এই যে—এই সব দেবতা এবং এদেরসহ সম্পূর্ণ সৃষ্টি জগৎ তোমার অতি ক্ষুদ্র শক্তিখণ্ডের মধ্যেই ধারণ ও নিয়ন্ত্রিত। তাই বেদ-শ্রুতি তোমাকেই “শম্ভু”, “আদিদেব”—এই নামে পরমসত্য হিসেবে ঘোষণা করেছে।


👉 দার্শনিক অর্থ-স্তরঃ- 


☘️ 1. এক সত্য, বহু নাম (ঐক্যবাদের ঘোষণা):


শ্লোকে বলা হচ্ছে—সকল দেবতা-রূপ (ইন্দ্র, বরুণ, বিষ্ণু, রুদ্র, ব্রহ্মা ইত্যাদি) আসলে এক পরমসত্তার (পরমশিব) নানা রূপে আভাস। নাম-রূপ পরিবর্তিত হলেও, অন্তর্নিহিত সত্তা এক ও অভিন্ন।


☘️ 2. ‘মায়া-মোহ’ কী বোঝাচ্ছে:


“তে মায়য়া মোহিতাঃ”—নাম-রূপে আবিষ্ট বোধ যখন মূল পরমসত্তাকে ভিন্ন-ভিন্ন দেবতা হিসেবে আলাদা আলাদা করে দেখে, তখন সেটি মায়ার প্রভাব। মায়া মানে বাস্তবতার অস্বীকার নয়; বরং বহুত্বের আবরণ, যা আদি ঐক্যটিকে ঢেকে রাখে।


☘️ 3. ‘শক্তি-লেশ’—ক্ষমতার পরিমাপ:


“যত শক্তি-লেশে সমাপ্তম্”—‘লেশ’ মানে ক্ষুদ্র অংশ। সমগ্র জগত, নানাবিধ দেবশক্তি—সবই পরমশিবের অসীম শক্তির এক ক্ষুদ্র কণিকায় সীমাবদ্ধ। এতে বোঝানো হয়েছে পরমসত্তার অপরিমেয়তা ও স্বয়ংসম্পূর্ণতা।


☘️ 4. শ্রুতি-প্রমাণের গুরুত্ব:


“শ্রুতিষু বিদিতঃ”—বেদ-উক্তি বা শ্রুতি-প্রমাণ এখানে চূড়ান্ত কর্তৃত্ব। বেদ শম্ভুকে ‘আদিদেব’ নামে জানায়—অর্থাৎ সৃষ্টির কারণ, ধারক ও একমাত্র পরম আশ্রয়।


☘️ 5. রূপ-অরূপের সমন্বয়:


শ্লোকটি সগুণ (দেবতার রূপে ব্যক্ত) ও নির্বিশেষ নির্গুণ (রূপাতীত পরম)—উভয় স্তরকে মিলিয়ে দেয়। দেবতারা কার্য-শক্তির রূপ; পরমশিব সেই শক্তির উৎস ও সীমাহীন ভিত্তি।


☘️ 6. অ-সংকীর্ণ শৈব দৃষ্টিভঙ্গি:


এখানে অন্য দেবতাদের অস্বীকার নয়; বরং বলা হচ্ছে—তাঁরা সকলেই পরমশক্তির প্রকাশ। তাই কোনও দেবতার উপাসনাও, সর্বোচ্চ দৃষ্টিতে, পরমশিবের দিকেই গমন।


শিবঃ পরমেশ্বরায় নমঃ 🌸 

বন্দে শিবঃ চিদম্বরম্। 

বন্দে তামিল শৈব সিদ্ধান্ত পরম্পরাম্। 🚩


তথ্য সংগ্রহ ও লেখনীতে —

© শৌর্যনাথ শৈব। (ISSGT)


#শৈবসনাতনধর্ম #ISSGT #শৈবধর্ম #shaivasidhantam #shiva

Comments

Popular posts from this blog

।। লিঙ্গাষ্ঠোত্তরশতনামাবলী ।।

☘️ "অপমৃত্যুহরং মহামৃত্যুঞ্জয় স্তোত্রম্" ☘️

বীরশৈব পরম্পার সংস্থাপক, জগতগুরু পঞ্চাচার্যের বিষয়ে সংক্ষিপ্ত বিবরণঃ-